top of page

অপুর বাড়ির পথ

  • Writer: Shrabanti Mitra
    Shrabanti Mitra
  • Mar 17, 2021
  • 7 min read

Updated: Mar 22, 2021


শেষ পর্ব


সকালে উঠে দেখি ফের ঝকঝকে একটা নীল আকাশ। পাহাড়ের তো এটাই মজা, এক নিমেষে মন ভালো করে দেবার ক্ষমতা রাখে বটে! চটপট ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য বুরুডি লেক। তবে, বুরুডি লেক যাবার আগে অবশ্য ঘাটশিলা লাইব্রেরীটা একবার চক্কর কেটে গেলাম।


ঘাটশিলা গ্রন্থাগার


একটা বড় মাঠের মাঝখানে বাড়িটা, যার ভালো নাম ঘাটশিলা বিভূতি স্মৃতি সংসদ। সেখানে তখন আঁকার ক্লাস চলছে। মাস্টারমশায়ের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, এখানে আর বইপত্তর কিছুই নেই। ক্লাসরুম হিসেবে একটা ঘরে আঁকা আর অঙ্কের ক্লাস চলে। ভদ্রলোক আসেন প্রতি সপ্তাহে ঝাড়গ্রাম থেকে ভোরের ট্রেনে। অনেকবার কথা বলেছিলেন বিভুতিবাবুর পরিবার আর স্থানীয় সরকারি কমিটির সাথে এই লাইব্রেরীর পুনঃনির্মাণের ব্যাপারে, কোন লাভ হয়নি। অগত্যা, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাস্টারমশাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বুরুডি লেকের দিকে এগিয়ে গেলাম।



ঘাটশিলা ছাড়িয়ে আঁকাবাঁকা, এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে তখন এগোচ্ছে আমাদের অটো। পথের দুপাশে জ্যান্ত পাথর সারি সারি। টিঙ্কুদা বলল, এগুলো নাকি বেড়ে ওঠে মানুষের মত একটু একটু করে। কি কাণ্ড!


বুরুডি লেক, অদুরে পাহাড়


সবুজ ঘাসজমি পেরিয়ে দূরের পাহাড়টার কাছে পৌঁছেছি তখন। এতটা পাওনা ছিল আগে জানতাম না। নীলচে সোনা নদীর ওপারে আধো কুয়াশাময় সুনির্মল বুরুডি পাহাড়। যেদিক থেকেই দেখিনা কেন একইরকম সুন্দর লাগে। ইচ্ছে করে জলে ডুব দিয়ে দেখি, ভেতরে তামা আছে না সোনা?


ওদিকের রাস্তায় পাইনের সারি বেয়ে কিছুটা ওঠার চেষ্টা করলাম পাহাড়ের ওপর। খানিকটা ওঠার পর দম ফুরলো যেই, বসে পড়লাম একটা গাছ ধরে। দুপাশের নৈঃশব্দতা, পাতা ঝরে পরার শব্দে মুখরিত হয়ে উঠল। গাছেরাও কথা বলে...



বুরুডির পর্ব সেরে চরম খাড়াই রাস্তায় তুমুল ঝাঁকুনির সাথে নিজের মনোবল আর ক্যমেরাকে আগলাতে আগলাতে পৌঁছলাম ধারাগিরি ফলস। এখানে ধু’ ধু’ করা লালমাটির বনপ্রান্তর পেরিয়ে, আলোছায়া ঘেরা পাথরে, পা ঘষতে ঘষতে জলাধারে পৌঁছতে হয়।



জলাধারই বটে। পথের যেখানে শেষ, সেখানে আবছা অন্ধকারে শুকিয়ে যাওয়া জল, পাথরের ঘাঁজ বেয়ে বেয়ে, গড়িয়ে পড়ছে নীচের দিকে।


ধারাগিরির ঝর্ণাধারা


আশেপাশে ছড়িয়ে আছে চিপ্সের প্যাকেট আর কোলড্রিঙ্কসের বোতল। মানুষ বোধহয়, এভাবেই প্রকৃতিকে শেষ করে দেবে একটু একটু করে। ওদিকে পাথর পেরিয়ে একটা ছোট্ট ঘর। কিছুই নেই ভেতরে। তাতেই সবাই খুব আনন্দ পেয়েছে দেখলাম। নুড়ি-পাথরের এধার-ওধার দিয়ে ধীর পায়ে ফিরে গেলাম গাছগাছালি ধরে ধরে।



এরপর আবার সেই তীব্র ভূকম্পমান যাত্রাপথ। খানিকটা এবড়োখেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম একটা সাঁওতালি গ্রামের ভেতর মহুয়ার খোঁজে। নেশা চাপলে কি আর ছাড়ে! মাটির বাড়িগুলোর ধার ঘেঁষে ঘেঁষে ঘুরে বেড়াচ্ছি।



আদিবাসী মেয়েগুলো কেউ ধান ঝাড়ছে, কেউ কলসী মাথায় নিয়ে স্নান করতে যাচ্ছে। ছেলেপুলেরা সব এদিক-সেদিক কেউ গাছে চড়ছে, কেউ বটঝুরি ধরে দুলছে।



এসব দেখতে দেখতে একজনের বাড়িতে গেলাম মহুয়ার লোভে। ভেতরে ঢুকে দেখি মস্ত হাঁড়িতে টাটকা মহুলের গন্ধ ম’ ম’ করছে। দু-একটা শুকনো ফুল খেয়ে দেখলাম, আহ্‌! কি মিষ্টি! দামটা একটু বেশী নিল কাকা, তবে জিনিসটা যে সেরা সেটা গন্ধেই টের পেয়ে গেছি।


ব্যাগের ভেতর মুল্যবান সম্পদটি যথাস্থানে রেখে চললাম ফের বুরুডি লেকে খাওয়াদাওয়া সারতে।


মাটির রান্নাঘরের একধারে পরপর চেয়ার টেবিল পাতা। নদীর হাওয়ায় ছাউনির একধারে বসে সাঁওতালি হাতে দেশী মুরগীর ঝোল আর গরম ভাত খেয়ে এগিয়ে চললাম গালুডি ব্যারেজের দিকে।



ব্যারেজের পৌঁছে বুঝলাম, দেখেই যা সুখ, কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। মস্ত ব্রীজটার ওপর থেকে গালুডির ড্যাম দুপাশে তার মত করে বিস্তৃত। বিশাল জলাভূমির দুপাশে এলোমেলো ভাবে গজিয়ে ওঠা বনাঞ্চল, দূর থেকে দ্বীপের মত লাগছিল।



গাঢ় নীল রঙ, শ্যাওলা আর পলি জমে জমে কালচে ধরণের হয়ে গেছে অনেকটা। অদূরে আকাশি পাহাড়টা, পেলব লাগছে চোখে এই যা...




রাস্তার ওপারে একটা শিমূল গাছ, লালে লাল হয়ে গেছে। পলাশের চেয়ে শিমুলই বা কম কিসে! বসন্তের আকাশে যেন সব ফুলই মোহময় মনে হয়।


আদি রঙ্কিণী দেবীর মন্দির


এরপর গাড়িতে উঠে গেলাম জাদুগোড়া আদি রঙ্কিণী দেবীর মন্দির। পাহাড়ে ওপরে অবস্থিত এই আদি মন্দিরটি রাজা জগন্নাথ স্বপ্নাদেশ পেয়ে নির্মাণ করেন। রঙ্কিণী মাতা ছিলেন রাজপুতানা থেকে আগত রাজপুতদের প্রধান আরাধ্যা দেবী। সেসময় মুণ্ডা উপজাতির আদি বসবাস ছিল এই অঞ্চলে, যারা এককালে অসুরের বংশধর হিসেবে পরিচিত ছিল লোকসমাজে। এখনো সেই বিশ্বাস এদের মনে রয়ে গেছে। সেই যুগে, এখানে ছাগবলির সঙ্গে সঙ্গে নরবলিও নাকী হত প্রায়ই। এইসব গুপ্ত তন্ত্রসাধনা ক্ষেত্রের আশেপাশে, পঞ্চমুণ্ডীর আসনও লুকিয়ে আছে কোথাও কোথাও।



মন্দিরের কারকাজ প্রাচীনত্বের বৈশিষ্ট্য বহন করে। মন্দিরের উপরাংশে মহিষাসুরমর্দিনীর পূর্ণচিত্রে মা দুর্গার পাশে কঙ্কালের ছবি দেখে প্রশ্ন জাগল মনে, উত্তর পেলাম না। এর ওপরে রয়েছেন মা কালী এবং পাশাপাশি রয়েছে আরও অনেক দেবদেবীর ছবি।



মন্দিরের ভেতরে দেবী মূর্তি আদতে পাহাড়েরই একটা অংশ। এখানে রঙ্কিণী মাতা মা কালী রুপেই আরাধ্যিত হন। গাঢ় লাল রঙের পাথরের ওপর কতকগুলো চোখ বসানো, তার ওপরে দু-তিনটে মুকুট, এর নীচে ছবিতে মালা পরিয়ে পুজো করা হচ্ছে।



সারাদিনই পুজো চলে এখানে। ভয়ঙ্করতাকে গ্রাস করছে যেন দেবীর জাগ্রত রূপ! বাকী সব জাগ্রত মন্দিরের মত এখানেও নাকি মানদ করলে সুফল পাওয়া যায়।



এখান থেকে বেরিয়ে এগোলাম সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ের দিকে। দুপুরের তপ্ত হাওয়ায় আর লালচে রোদে বেশ কঠিন মনে হচ্ছিল তখন পাহাড়ের পথ। গোটা রাস্তা জুড়ে বেশকিছু পলাশ গাছ চোখে পড়ল, তবে একটাও ফুল ধরেনি সেগুলোয়। দুপাশের সবুজ গাছগুলো প্রায় ঝলসে উঠেছে, ঘন নীল আসমানিয়ার নীচে।



আরো কিছুটা ওঠার পর গাছের ফাঁক থেকে ভাসমান মেঘ দেখে মনে হচ্ছে যেন একরাশ পলকা তুলো, ছুঁয়ে দিলেই নীচে নেমে আসবে হাওয়ার সাথে।



পাহাড়ের একদম ওপরে একটা পাতাবিহীন বৃদ্ধ গাছ, ছায়ার আঁচলে ঘিরে রেখেছে একটা শিব মন্দিরকে।


সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ের ওপরে শিবের মন্দির


পাহাড়ের ওপর থেকে যেদিকেই তাকাই না কেন, খানিকটা ধুসর আর খানিকটা নীলের আবরণে গোটা ঘাটশিলা শহরটাকে দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল, চাঁদনি রাতে জোছনা মাখা গাছগুলো যখন হাওয়ার সাথে গুঁড়ো গুঁড়ো লাল মাটি উড়িয়ে দেবে বাতাসে, তখন দেখতে কেমন লাগবে!



মানুষের আকাঙ্খার কোন সীমা নেই। যা সামনে দেখি, তারচেয়েও ভালো লাগে ভাবতে, যা কিছু কাল্পনিক। মন্দিরের সামনে এক প্রৌঢ় দম্পতি জালা ভরা টাটকা জল দান করেন সকলকে সারাদিন বসে বসে। নিত্যপূজা তো সেভাবে হয়না, হয় শুধু শিবরাত্রিতে পুজো এখানে মহা সমারোহে।



তাই প্রতিদিন বলতে গেলে একটু ফুল আর কয়েকটা ধূপ নিয়ে বসা ছাড়া, এটাই এঁদের কাজ। এতটা পথ ওঠার পর ওই দুপুর রোদে, একটু জল যেন জীবনদান মনে হয়।



ক্রমে ফেরার পথ মলিন হয়ে বিকেল গড়াল। সিদ্ধেশ্বর পাহাড় থেকে ফেরার পথে দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে মেয়েরা সব লাইন দিয়ে হাঁটছে। পরনে তাদের রঙিন শাড়ি, মাথায় ফুল, কানে ঝুমকোলতা্র মত পাখীর পালক দেওয়া কি একটা অদ্ভুত জিনিস!



টিঙ্কুদাকে জিজ্ঞেস করলাম এরা সব কোথায় যায়? টিঙ্কুদা বলল, আজ তো এদের বাহা পরব গো। প্রতি বছর ফাগুন মাসের পূর্ণিমা তিথি থেকে চৈত্রমাস জুড়ে পরব চলে এদের, মেলা বসে। একটু পরেই দেখ না, এইসব রাস্তায় ভিড়ের ঠেলায় অস্থির হয়ে যাবে, আলো জ্বলবে, বাজনা বাজবে, নাচ হবে, গান হবে। আনন্দে প্রাণটা তখন ছটপট করছে। এমন পরব দেখার তো বহুদিনের সাধ ছিল। আজ যখন এসেই পড়েছি, তখন যাই হয়ে যাক না কেন, যেতেই হবে। দাদা বলল, গাড়ি কিন্তু অনেকটা আগে দাঁড় করাতে হবে। বেশী রাত করো না তোমরা, ফিরতে হবে তো? এ রাস্তায় কিন্তু মাতালরা ভরে যায়...



ওসব কথা তখন আর শুনতে পাচ্ছিনা, দুর থেকে ভেসে আসা মাদলের আওয়াজটাকে লক্ষ করে ছুটছি…


বাহা পরব এবং মেলা


গাদা লোকের ভিড় ঠেলতে ঠেলতে এগোচ্ছি। দলে দলে শুধু লাল পেড়ে সবুজ শাড়ি আর মাথায় ফুলের খোঁপা। বাহা মানে তো ফুল, আর ফুলের উৎসব তো এদের কাছে বসন্তেরই উৎসব।



দুপাশারি রাস্তায় কাঁচের চুড়ি, কানের দুল, প্লাস্টিকের খেলনা, গ্যাসবেলুন, চাউমিন আর বাদামভাজার পাশাপাশি লাইন দিয়ে গ্রামের মেয়েরা নিয়ে বসেছে হাঁড়িয়া, এক গ্লাস দশ টাকা। ওদিকে একটু আড়াল করে আগুণে পোড়ানো হচ্ছে মাংস, তারপর তা কলাপাতায় মুড়ে বিক্রি করছে আদিবাসীরা, আমরা যাকে বাংলায় “চিকেন পাতুরি” বলতে পারি।



মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া বেঁটে মতন এক ভদ্রলোক বেহালা বাজাচ্ছেন। এই সুরটা কোথাও শুনেছি কি? চেনা চেনা লাগছে।



মেলার ভিড় পেরিয়ে শেষে ঠেলেঠুলে ঢুকতে পারলাম ভেতরের মাঠটায়। সেখানে তখন উল্লাসে মেতে উঠেছে সবাই। এক সারি মেয়েরা, লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে, কোমর বেঁধে, মাদল আর বাঁশীর ছন্দে পা মেলাচ্ছে।



ওদিকে আবার মাথায় লম্বা পালক, সাদা গেঞ্জি আর হলুদ-সবুজ লুঙ্গীর মত দেখতে কি একটা পরে, কেউ বাজাচ্ছে ঢোল, কেউ বাজাচ্ছে ঢাক, কেউ আবার মেয়েদের সাথে সাথে হাততালি দিয়ে নাচছে।



কারো চোখ মহুয়ার নেশায় লাল, টাল সামলাতে পারছেনা ভিড়ের মধ্যে। প্রায় তিন চারটে গোল গণ্ডী সাজিয়ে, হাতে হাত ধরে আগলে রেখেছে নিজেদের।



পড়ন্ত বিকেলের হলুদ আলোর ছটা, ওদের কারো কারো মুখে এসে পড়ছে। কী সাবলীল! কী অনায়াস! আজ তো ওদেরই মিলন উৎসব।



এইসব মাটির কাছাকাছি মিশে থাকা পরবগুলো এখনো এদের শিকড়টাকে আঁকড়ে ধরে উৎযাপন করতে পারে, ওদের নিজের ভাষায়, নিজের ছন্দের তালে তালে। আমরা তবে হাল ছেড়ে দিচ্ছি কেন?


সন্ধ্যে হয়ে গেল। হ্যালোজেনের তীব্র সাদা আলো, শেষ বিকেলের নীলচে আলোটাকে ফ্যাসফ্যাসে করে দিল এক নিমেষে।



মাদলের শব্দগুলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে গেল। সাঁওতালি মেয়েরা সব মেয়েলি কোমরের বন্ধন ছেড়ে, যে যার মরদকে সঙ্গে নিয়ে মিলিয়ে গেল মেলার ভিড়ে। মোমের আলোয় তখনও চলছে বিকিকিনির হাট।




তো ফিরতে হবে। টিঙ্কুদা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে রাস্তার মোড়ে। এদিকে রাস্তায় পা ফেলার জায়গা নেই। মহুয়ার গন্ধে ভুরভুর করছে চারপাশ। সামনের বট গাছটার তেরচা ডালের আড়াল থেকে, চাঁদটা বড় স্নিগ্ধ লাগছে। জ্যোৎস্নার আলোয় ভিজে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। একঘেয়ে একটা সুর, একটানা কানে বেজে চলেছে। ঘরে ফেরার সুরগুলো কি এমনই একঘেয়ে হয়?



রিনরিনে মনখারাপটা সঙ্গে নিয়ে স্টেশনের দিকে এগোলাম। প্ল্যাটফর্ম ধুয়ে গেছে জ্বলজ্বলে জ্যোৎস্নায়। কিছুটা স্মৃতির নাগাল পেলাম, বাকীটা হলদে হয়ে যাওয়া বইয়ের পাতার ভেতর ভাঁজ করে রাখা থাকল। যা কিছু বদলালো, সেগুলোও হয়ত স্মৃতি হয়ে যাবে একদিন। তখন নতুন কেউ এসে গল্প বুনবে, অপুর পথের পাশ দিয়ে যেতে যেতে।



জরুরী কথাগুলোঃ


  • ঘাটশিলা বছরের যে কোন সময়ই দুদিনের জন্য যাওয়া যায়। আমি যে যে জায়গায় গেছি, এই প্ল্যান অনুযায়ী গেলে দুটো পুরো দিন আদর্শ। এরপর দুয়ারসিনি, ভালো পাহাড় অথবা টাটা, জামশেদপুর ইত্যাদি আরও অন্যদিকে যেতে চাইলে আরও এক-দুদিন হাতে সময় রাখতে হবে।


  • যাবার জন্য সবচেয়ে ভালো ট্রেন ইস্পাত এক্সপ্রেস, ফেরার জন্যেও তাই। আর যদি জনশতাব্দী ধরতে চান, তাহলে আরও আগে উঠতে হবে আপনাকে। এবার পুরো ব্যাপারটা হালকা রিস্কি আর কি! আর দ্বিতীয় দিন রাতে স্টে করে পরের দিন সকালে ফিরতে চাইলে ষ্টীল এক্সপ্রেস আপনার জন্য একদম পারফেক্ট। অনেকে তো শুনেছি, ষ্টীল ধরে হাওড়ায় নেমে অফিস করে আবার বিকেলের ষ্টীলে বাড়ি ফেরে।


  • যদি দোল অথবা অন্য কোন বিশেষ সিজনে যান, তাহলে সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, আগে থেকে হোটেল বুক করে রাখা। কারণ, ঘাটশিলায় ভালো হোটেলের সংখ্যা খুবই কম। বহু লোককে থাকার জায়গার অভাবে ফিরে যেতে দেখেছি। আর শেষ মুহূর্তে বুক করে আমার মত কেলেঙ্কারির একশেষ যাতে না হয়, তার জন্য মোটামুটি ২-৩ মাস আগে থেকে ভালো হোটেল ঠিক করে রাখাই বাঞ্ছনীয়। যদি গালুডিতে থাকেন, তাহলে দু-একটা ভালো হোম স্টে পাবেন, তবে ওই একই কেস। গিজগিজে ভিড়।


  • গাড়ির ক্ষেত্রে ঘাটশিলা স্টেশনের বাইরে যে রেট চার্ট আছে প্রতিটা জায়গার, সেই অনুযায়ীই সব অটোওয়ালারা ভাড়া নির্দিষ্ট করেন। এখানে দামাদামির কোন গল্প নেই। প্রত্যেকেই ষ্টেশন টু ষ্টেশন পিক আপ টু ড্রপ ভায়া সাইট সিন- এই সিস্টেমে চলেন। তবে বিশেষ সিজনে আগে থেকে অটো বুক করে রাখাই ভালো। তবে বুরুডি, ধারাগিরি যাবার ক্ষেত্রে অটোয় প্রবল ঝাঁকুনির সম্ভবনা আছে, তাই যদি লোকজন বেশী থাকে তাহলে ভালো গাড়ি বুক করাই ভালো। তবে দুদিনের জন্য অটোই সাশ্রয়কারী। দোলের সিজনে দুদিনের ভাড়া সব মিলিয়ে আমার লেগেছিল ২০০০ টাকা।


  • খাবারদাবারের ক্ষেত্রে খুব আহামরি দোকান তেমন একটা নেই ঘাটশিলায়। তবে, চলে যাবার মত খাবার দোকান আশেপাশে পাওয়া যাবে। আর ভালো গেস্ট হাউসে থাকলে তো খাবার ব্যবস্থা ওখান থেকেই হয়ে যাবে।


  • ঘাটশিলায় বিশেষ খাবার বলতে আছে কালাকাঁদ, যা আমার দেখা মাত্র দুটো দোকানেই পাওয়া যায়। এক হল গনেশের কালাকাঁদ, আর দ্বিতীয়টার নাম ভুলে গেছি। তবে, অর্ডার ছাড়া কেউ মিষ্টি দেবেনা আপনাকে। কি জানি দোলের সময় বলে কিনা, আমি তো দোলের আগের দিন বিকেলে গিয়ে মিষ্টি খেতে গিয়ে শুনলাম আগামীকালের সব অর্ডার নেওয়া হয়ে গেছে, চেখে দেখার জন্যেও কিছু পাওয়া যাবেনা। সত্যি বলতে কি, চরম হতাশ হয়েছিলাম।


  • আর একটা জরুরী বিষয় হল, ইদানীং কালে আবহাওয়ার যা মতিগতি, তাতে করে ঘাটশিলায় বা গালুডিতে দোলের সময় পলাশ খুঁজতে গিয়ে তেমন লাভ নেই। এমনিতেই বসন্তের মনোরম পরিবেশে ঘুরতে দারুন ফুরফুরে লাগে। তাই, আলাদা করে পলাশের পিছনে দৌড়নোর আমার তেমন মন ছিল না। তাই, “না পেলে পলাশ হোওনা হতাশ”- এই ট্যাগলাইন মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে।


  • আর একটা শেষ অনুরোধ, বনে-জঙ্গলে-পাহাড়ে-নদীতে যেখানেই যান না কেন, প্ল্যাস্টিক ফেলে পরিবেশ দূষণ করবেন না প্লিস। দরকার হলে, সব প্ল্যাস্টিক নিজের ব্যাগে রাখুন, বাড়ি ফিরে নিজের বাড়ির ডাস্টবিনে ফেলবেন। এতে পরেরবার বেড়াতে গেলে আমাদেরই ভালো লাগবে।



 
 
 

2 Komentar


Atanu Biswas
Atanu Biswas
04 Apr 2021

ইস চিকেন পাতুরী টা মিস করে গেলাম!!! আরো একবার ঘাটশিলা ভ্রমন করে ফেললাম। তবে এবারের মানস ভ্রমনে ঘাটশিলাকে অনেক বেশি রঙ্গীন আর বৈচিত্র্যময় রূপে পেলাম।

Suka
Shrabanti Mitra
Shrabanti Mitra
24 Apr 2021
Membalas kepada

ঘাটশিলা আমাদের চিরসঙ্গী। অনেক ধন্যবাদ, সঙ্গে থাকুন। 😊

Suka

© 2023 by NOMAD ON THE ROAD. Proudly created with Wix.com

  • Facebook
  • Instagram
bottom of page