top of page

ঐতিহ্যের ঐক্যপীঠ শান্তিপুর

  • Writer: Shrabanti Mitra
    Shrabanti Mitra
  • Jan 7, 2022
  • 6 min read




বাংলার ইতিহাস ও প্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম পীঠস্থান এবং গঙ্গা তীরবর্তী একটি অন্যতম জনপদ শান্তিপুর, যেখানে ইতিহাসের সর্বধর্মসমন্নয় ঘটেছে। ইতিহাস বলতে শুধু স্থাপত্যের ইতিহাস নয়, এখানে রয়েছে শিল্পের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস, ধর্মের ইতিহাস এবং সর্বপোরি উৎসবেরও ইতিহাস। প্রতিটি উৎসব উৎযাপনের ভঙ্গিমাই এখানে আড়ম্বরপূর্ণ। দুর্গাপুজোয় প্রাচীন বনেদী বাড়িগুলির পুজো এখনও একইরকম ভাবে বনেদী ঐতিহ্য মেনে পালিত হয়ে আসছে এখানে। এছাড়া রয়েছে পাঁচশো বছরের প্রাচীন কালীপুজো। কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয় প্রতিবার এই সময়, সারারাত ধরে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুজো চলে। কালীপুজোর ঠিক পরেই আসে জগদ্ধাত্রী পুজো। এই উৎসবও এখানে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে বেশ কিছু বাড়িতে এবং বারোয়ারিতেও। তবে শান্তিপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব সম্ভবত রাস, যেখানে শাক্ত ও বৈষ্ণব মতের ধর্মাচরণের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে। বিগ্রহ বাড়ি থেকে শুরু করে বারোয়ারির মণ্ডপসহ সবেতেই রাসলীলা চলতে থাকে টানা ৩ দিন ব্যাপী। প্রথমে আসে মধ্য রাস, তারপর ভাঙ্গা রাস এবং সবশেষে বিশেষ কুঞ্জভঙ্গের মাধ্যমে সমাপন ঘটে এই রাস উৎসবের। এ তো গেল উৎসবভিত্তিক আড়ম্বরের গল্প। এছাড়া শান্তিপুরের আনাচেকানাচে যে সমস্ত বিশেষ ঐতিহ্যপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানগুলি রয়েছে সেগুলির কথাই বলব আজ।



প্রথমেই বলা দরকার যে শান্তিপুর দর্শন শুরু করা যেতে পারে ফুলিয়া থেকে। শান্তিপুরের ৬ কিমি আগে ফুলিয়া। কলকাতা কিংবা বহিরাগত যে কোন পর্যটক যে কোনো যানবাহনের মাধ্যম আগে এসে পড়বেন ফুলিয়াতে। তাই আগে ফুলিয়া বেড়িয়ে নিয়ে তারপর শান্তিপুরের দিকে এগোনোই ভালো।





ফুলিয়ার বয়রা গ্রামে রামায়ণ রচয়িতা কৃত্তিবাসের জন্মস্থান। যেখানে কৃত্তিবাসের জন্মভিটে ছিল সেখানে তৈরি হয়েছে কৃত্তিবাস মন্দির। মন্দিরটি তেমন প্রাচীন না হলেও কৃত্তিবাসের স্মৃতিতে যে স্তম্ভ এখানে রয়েছে তা প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো।



কৃত্তিবাস মন্দিরের ভেতর


স্মৃতিস্তম্ভের পিছনে রয়েছে ইতিহাস সাক্ষী করা এক বিশাল বট গাছ। শোনা যায়, এই গাছের নীচে বসেই নাকি রামায়ণ লিখতেন কবি কৃত্তিবাস।



এর ঠিক কাছেই ‘যবন হরিদাসের’ ভজনস্থলী। মুসলমান হয়েও শ্রীচৈতন্যের ভক্ত হওয়ায় অসহ্য অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল হরিদাসকে সে যুগে।


যবন হরিদাসের ভজনস্থলী

যে অঞ্চল জুড়ে এই ঐতিহাসিক স্থান গড়ে উঠেছে ঠিক তার পাশেই রয়েছে কৃত্তিবাস মেমোরিয়াল লাইব্রেরি সহ মিউজিয়াম। এখানে কৃত্তিবাস সৃষ্ট নানান ইতিহাসের বিভিন্ন দলিল স্বচক্ষে দেখা যেতে পারে। এটি বুধবার এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ মঙ্গলবার বাদে অন্য সব দিন বেলা একটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে।


কৃত্তিবাস মেমোরিয়াল লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম


এখান থেকে বেরিয়ে একটু এগোলেই দেখা যেতে পারে রাধিকামোহন বানপ্রস্থ আশ্রম।




এই পৌরাণিক কাহিনীর রেশ রাখতে চলে আসা যেতে পারে শান্তিপুরের শহরতলি বাবলায়। শান্তিপুরের বাইপাস সংলগ্ন অঞ্চল, এই বাবলা হল বৈষ্ণবতীর্থ শান্তিপুরের প্রধান আকর্ষণ। এখানে পৌছতে গেলে আমবাগানের মাঝের পথ দিয়ে পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় নিমাইয়ের শিক্ষাগুরু অদ্বৈতাচার্যের সাধনপীঠে।


শ্রী শ্রী অদ্বৈত পাট, বাবলা


বাবলার মন্দির গৃহে



গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্যের মিলন ঘটেছিল এই বাবলায়। সন্ন্যাস গ্রহণের পর এখানেই নিমাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শচীমাতার। এই সাধনপীঠে দশ দিন বসবাস করে সন্ন্যাসীপুত্রের সেবা করেছিলেন তিনি। এই অদ্বৈতাচার্যের বংশেই জন্ম নিয়েছিলেন আরেক বৈষ্ণবসাধক শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। তাঁরও জন্মভিটেতে আজও প্রতি বছর মহা সমারোহে রাস উৎসব ও পালাগান অনুষ্ঠিত হয়।



ফুলিয়ার তাঁতি বাড়িতে বোনা হচ্ছে হাতে তৈরী তাঁতের শাড়ি



এরপর হাতে সময় নিয়ে একটি টোটো বা রিকশা ধরে ফুলিয়ার বিখ্যাত তাঁত শিল্পের কর্মক্ষেত্রগুলি দেখা যেতে পারে তাঁত বাড়ীগুলিতে ঘুরে ঘুরে। এই সমস্ত বাড়িতে বেশীরভাগই হাতে তৈরি তাঁতের শাড়ি বোনা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে এখন আর শুধু তাঁত না সাথে হ্যান্ডলুম, লিলেন ও সুতির নানান রকমারি কাপড় বননেরও কাজ হয় এখানে।



প্রতিটি তাঁতির জীবন এখানে এক একটা গল্পের মত। সারাদিন পরিশ্রম করে একটা গোটা শাড়ি বোনবার পর নানান পাকচক্রে তাঁরা আসলে যে টাকাটা আয় করেন, তা তাঁদের খাটুনির তুলনায় বড়ই যৎসামান্য। মহাজনেদের হস্তক্ষেপ আর আমদানি রপ্তানির এই চক্রব্যূহে বুনন শিল্পীদের অবস্থা চিরকাল শোচনীয়ই থেকে গেছে। তবে হাতে সময় নিয়ে বেশ কয়েকটি তাঁত বাড়ি ঘুরে যদি শাড়ি কেনা যায় তবে শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশ খানিকটা সুলভেই জিনিস মিলতে পারে এখানে।




শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ি


এরপর যে কোন টোটো ধরে শান্তিপুর চলে আসার পর প্রথমেই গন্তব্য হতে পারে শান্তিপুরের পরম ভক্তিপূর্ণ আশ্রয়স্থল গোস্বামী বাড়ি। শ্রীশ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের পুত্র বলরাম মিশ্রের পুত্র মথুরেশ গোস্বামীর জ্যেষ্ঠপুত্র রাঘবেন্দ্র গোস্বামীর বাড়ি থেকে এই বাড়ি “বড় গোস্বামী বাড়ি” নামে খ্যাত হয়। এখানে অনুষ্ঠিত কুঞ্জ ভঙ্গে ঠাকুর নাচ দেখতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয়। রাস ছাড়াও এখানে বৈশাখী পূর্ণিমায় শ্রীশ্রী রাধারমণের ফুলদোল পালন করা হয়। শ্রীশ্রীরাধারমণ জীউর “জামাই ষষ্ঠী”-এর অনুষ্ঠান এবং রথযাত্রাও এখানে হয়ে থাকে।

  • এরপর একে একে দেখে নেওয়া যেতে পারে শান্তিপুরের কয়েকটি প্রাচীন মন্দির…



শ্যামচাঁদ মন্দিরঃ শান্তিপুরের শ্যামচাঁদ পাড়ায় এই আটচালা মন্দির এবং তৎসহ কোষ্ঠীপাথরের কৃষ্ণমূর্তিটি ১৭২৬ খ্রিস্টাব্দে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের শ্রী রামগোপাল খাঁ চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন। সে যুগে মন্দিরটি তৈরী করতে ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। এখানকার বিগ্রহ রাস উৎসবের সময় মন্দিরের দালানে সজ্জিত হয়, রাসের সময় বিগ্রহ শোভাযাত্রায় বাইরে বের হন না। একমাত্র দোলেই শ্যামচাঁদ নগর পরিক্রমায় বেরোন। এছাড়া পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশীতিথিতে এই মন্দিরে ১৫দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।





শ্রীশ্রী কালাচাঁদ জীউঃ প্রায় ৩০০বছর ধরে এখানে জাঁকজমকপূর্ণভাবে রাস উৎসব পালিত হতে দেখা যায়। শান্তিপুরের এই খাঁ চৌধুরী বংশের প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শ্যামচাঁদ, কালাচাঁদ, গোপীকান্ত এবং কৃষ্ণরায়। নিত্যপূজা ছাড়াও জন্মাষ্টমী, নন্দোৎসব, ঝুলনযাত্রা, দোলযাত্রা অতি ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয় এখানে। রাস উৎসবের সময় কালাচাঁদ বিগ্রহকে অধিষ্ঠিত করা হয় ঠাকুরদালানে এবং ভাঙা রাসের সময় তিনি মহা সমারোহে নগর পরিক্রমায় বেরোন। দোলের দিন কালাচাঁদ জিউর সাথে সাক্ষাৎ করতে শ্যামচাঁদ আসেন এই মন্দিরে।



মদনগোপাল মন্দিরঃ আনুমানিক ৪৩৫ বছর আগে, অদ্বৈতাচার্য্য নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মন্দিরটি। টানা তিনদিন ধরে রাস উৎসব পালন করা হয় এখানে। প্রথম দুদিন মদনগোপাল রাসমঞ্চে ওঠেন, তারপর তৃতীয় দিন উৎযাপন করা হয় ভাঙারাস। এই পরিবার বহু গুনী মানুষেরও জন্মক্ষেত্র হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।




কৃষ্ণ রায় ও কেশব রায় জীউঃ শান্তিপুরের প্রাচীন মন্দিরগুলির অন্যতম হল পাগলা গোস্বামী বাড়ির কৃষ্ণ রায় ও কেশব রায় জীউর মন্দির এবং বিগ্রহটি। শোনা যায়, কৃষ্ণনগর রাজ কর্তৃক প্রদত্ত সম্পত্তি প্রত্যাখ্যান অথবা নষ্ট করায়, তাঁর “আউলিয়া” খ্যাতি রাতারাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই থেকেই তাঁকে “পাগলা গোস্বামী” নামকরণ করা হয়। “কৃষ্ণরাই” প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাঁচ বছর পর পুনরায় “কেশবরাই” প্রতিষ্ঠিত হন এখানে। এই পরিবারেও একইভাবে রাস উৎসব, দোল উৎসব, ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়।


বংশীবদন ঠাকুর বাড়ির মধ্য রাসের উৎসব


শ্রীশ্রীবংশীধারী জীউঃ ১৭৮৭ সালে শান্তিপুরের কাঁসারী পাড়া নিবাসী রাম যদুনাথ (কাঁসারী) বংশীধারীর মন্দিরটি স্থাপন করেন। পূর্বমুখী এই মন্দির প্রাঙ্গণের উত্তর ও দক্ষিণে দুটি আটচালার শিবমন্দির আছে। মন্দিরগুলিতে পোড়ামাটির স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন লক্ষ করা যায়। শিব মন্দিরের গর্ভগৃহের উত্তর দিকে যাদবেশ্বর ও দক্ষিণে কেশবেশ্বর নামে দুই কষ্টিপাথরের শিব এবং মধ্যিখানে বংশধারী ও রাধিকার যুগলমূর্তি রয়েছে। এখানে বংশীধারী জীউর রাস উৎসব, দোল, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি পালিত হয়। এই মন্দিরের আরাধ্য শীলার নাম “বংশীবদন” বলে অনেকেই এটিকে “বংশীবদন ঠাকুর বাড়ি” বা মন্দির বলে থাকেন।


সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরঃ এই মন্দিরটি স্থাপন করা হয় ১৬০৬ সালে, তৎকালীন রাজা ভবানন্দ মজুমদার শ্রী পার্বতীচরণ মুখোপাধ্যায়, মতান্তরে শ্রী ফকিরচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের হাতে এই মন্দিরের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন। এখানে বার্ষিক পূজা সম্পন্ন হয় কালীপুজোর সময়। আগে এই মন্দিরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তিটি ছিল মাটির তৈরী; পরবর্তীকালে কাশী থেকে এনে এখানে পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়।


বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বাড়ির রাসসজ্জা, মধ্যরাসের দিন


বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বাটীঃ শান্তিপুরের প্রাচীন মন্দিরের অন্যতম শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর জীউর মন্দির এটি। মন্দিরটি প্রায় আনুমানিক ৪৫০ বছরের প্রাচীন। শোনা যায়, অদ্বৈতাচার্য্য বলরাম এই বিগ্রহের প্রতিষ্ঠাকার্য নিজ হাতে এগিয়ে নিয়ে গেছিলেন অনেকখানি এবং এর পাশাপাশি শ্রীশ্রীঅদ্বৈতপ্রভুর নাতি শ্রীশ্রী দেবকীনন্দন গোস্বামী প্রতিষ্ঠা দেন এই মন্দিরের এবং দেবকীনন্দনের নির্দেশ মতোই এখনও বিগ্রহের সেবাপূজা হয়ে আসছে এখানে। দোলপূর্ণিমা, ঝুলন পূর্ণিমা, জন্মাষ্টমী এই বাড়িতে সাড়ম্বরে হলেও, এই বাড়ির বিশেষত্ব রাস উৎসব। রাসের তৃতীয় দিন যুগলমূর্তি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে শান্তিপুরের পথে নগর পরিক্রমায় অংশ নেয়, এর সঙ্গে দরিদ্রনারায়ণ সেবাও করা হয় এখানে। এছাড়াও এই পরিবারে রাসের প্রথম দু’দিন গুণীজনের উদ্দেশ্যে সম্মান প্রদান করা হয়। যে যে ব্যক্তিকে এখানে ভূষিত করা হয় তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কাশীর শঙ্করাচার্য। আজও এই বাড়িতে নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিত হন শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর জীউ।


গোপীকান্ত জীউর মন্দিরে রাসসজ্জা


গোপীকান্ত জীউর মন্দিরঃ শান্তিপুরের প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম এটি। এই বংশের রামচরণ খাঁ শ্রীশ্রীগোপীকান্ত জীউ নামে কৃষ্ণ রাধিকার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। শান্তিপুরের গোস্বামী বাড়িগুলির শ্রীকৃষ্ণ- রাধিকার যুগল বিগ্রহের রাসলীলা ও নগর পরিক্রমার প্রচলন করেন খাঁ বংশের পূ্র্বপুরুষ।


  • এছাড়াও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল-


  • আগমেশ্বরী কালী মন্দিরঃ তন্ত্রসিদ্ধ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের বংশধর শান্তিপুরে দক্ষিণা কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন; যিনিই দেবী আগমেশ্বরী নামে অধিষ্ঠিত।



দেবী আগমেশ্বরী


  • দেবী পটেশ্বরীঃ শান্তিপুরের পটেশ্বরীতলায় প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো বছর আগে তন্ত্রসাধকরা রাসপূর্ণিমাতে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করেন এবং তার ওপর বৃহদাকার পটে আঁকা দক্ষিণাকালীমূর্তি 'পটেশ্বরী'র পুজো শুরু করেন; পরে বারোয়ারি পূজা প্রবর্তিত হলে রাসোৎসবে পটেশ্বরী কালীমূর্তির শোভাযাত্রা শুরু হয়।


পটেশ্বরীতলার দেবী


  • এছাড়াও এখানে মহিষখাগী, শ্যামাচাঁদুনী, ঘাটচাঁদুনী, বিল্বেশ্বরী, সিদ্ধেশ্বরী প্রভৃতি লোকায়ত কালীমূর্তি অধিষ্ঠিতা আছে।



দেবী মহিষখাগী


পুরনো চাঁদুনী বাড়িতে চলছে দেবীর আরাধনা


  • এর পাশাপাশি শান্তিপুরের মতিগঞ্জ-বেজপাড়ায় রয়েছে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত পোড়ামাটির কারুকাজযুক্ত জলেশ্বর শিবমন্দির। এর সাথে, বউবাজার অঞ্চলে রয়েছে দক্ষিণাকালীর পঞ্চরত্ন মন্দির।


  • এছাড়াও, শান্তিপুরে রয়েছে ১৭০৩-০৪ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় ফৌজদার গাজী মহম্মদ ইয়ার খাঁ নির্মিত 'তোপখানা মসজিদ', যার গম্বুজ ও মিনার এখনো অক্ষত আছে।


  • এর পাশাপাশি এখানকার নতুনহাট এলাকায় ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে শরিয়ৎসাহেব একটি মসজিদ ও অতিথিশালা নির্মাণ করেন। এছাড়াও, ডাকঘর-পাড়ায় রয়েছে দুশো বছরেরও প্রাচীন একটি মসজিদ এবং তার পাশে রয়েছে ফকির তোপসেনিয়ার সমাধি।



শান্তিপুরে রয়েছে বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ, যেটির স্থাপনকাল ১৩১৬ বঙ্গাব্দ। এর একপাশের অংশ পরিচিত শ্রী লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি মন্দির (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ) নামে, এবং অন্যপাশের অংশ পরিচিত কুমার প্রমথনাথ রায় স্মৃতি মন্দির (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ) নামে। সেযুগে ধর্ম ও নীতির শিক্ষা দেওয়াই ছিল এই “বালক সমাজ” এর মূল উদ্দেশ্য। এখানে এখনো রাখা আছে ১২০০ টি দুষ্প্রাপ্য পুঁথি। বর্তমানে একশোর কাছাকাছি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এখানে এখনো পৌরাণিক সাহিত্যের পঠনপাঠন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।



তবে, শান্তিপুর শুধু চৈতন্যতীর্থই নয়। শহর হিসেবে আলাদা একটি গুরুত্ব ছিল ইংরেজ আমলে শান্তিপুরের। এখনো গঙ্গার পাশে পড়ে থাকা ভগ্নস্তূপটির দেওয়াল জুড়ে যে গোবরের ঘুঁটেগুলি দেখা যায়, তা ছিল সেসময়ে রেশম কুঠির প্রাণকেন্দ্র। একসময়, শান্তিপুরে প্রচুর নীল ও রেশম চাষ হতো। সেই ইতিহাস সাক্ষী রাখা রেশম কুঠি আজ প্রায় ধ্বংসীভূত। কেউ কেউ বলেন, এই শহরে বৌদ্ধস্তূপেরও অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে, কালের নিয়মে তা হয়ত আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।




শান্তিপুরে ভাঙ্গা রাসের দিন সিংহাসনে বসে কুমারীর নগর পরিক্রমা


  • কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন- মূলত কলকাতা থেকে শান্তিপুরে পৌঁছতে গেলে শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল ধরে নামতে হবে শান্তিপুর স্টেশন। আগে ফুলিয়ায় যেতে চাইলে নামতে হবে এর আগের স্টেশন ফুলিয়ায়। চাইলে একদিনেই টোটো ভাড়া করে সমস্ত জায়গা ঘুরে ফিরে আসা যায়। তবে উৎসবের সময় বিশেষ করে কালীপুজো এবং রাসযাত্রার সময় বেশ কয়েকমাস আগে থেকে থাকবার ব্যবস্থা করে নেওয়াই ভালো। থাকবার জায়গা বলতে এখানে মূলত রয়েছে শান্তিপুর পৌরসভার লজ, যেটি আগে থেকে বুক করতে হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি লোকাল হোটেল, যেগুলির সাথেও আগে থেকে কথা বলে রাখাই ভালো। এইসমস্ত হোটেলের ভাড়া মোটামুটি সাধারণের আয়ত্তের মধ্যেই। তবে উৎসবের বিশেষ মরশুমে ভাড়ার নানান পরিবর্তন হতে পারে, এটা মাথায় রেখে যাওয়াই ভালো।



 
 
 

2 commentaires


Kolkatar Nokshi Kotha - Salil Hore
Kolkatar Nokshi Kotha - Salil Hore
08 janv. 2022

সমৃদ্ধ হলাম।

J'aime
Shrabanti Mitra
Shrabanti Mitra
08 janv. 2022
En réponse à

অনেক ধন্যবাদ 😊🙏

J'aime

© 2023 by NOMAD ON THE ROAD. Proudly created with Wix.com

  • Facebook
  • Instagram
bottom of page