top of page

কুয়াশা তুলিতে আঁকা কলকাতা

  • Writer: Shrabanti Mitra
    Shrabanti Mitra
  • Jan 22, 2021
  • 3 min read


কুয়াশা জড়িয়ে থাকে ভোরের আকাশে। সে কুয়াশা ঘোরতর অন্ধকারে ঘুম থেকে তুলে আমাদের আজন্মকালের পরিচিত মাঠটায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। যে মাঠটায় হাসি-রাগ-অভিমান-ঝগড়া-আপোষ মাখা কনকনে স্মৃতি লেপটে আছে শিশিরকণার মত। আমরা অনেকেই বারবার ফিরে ফিরে যাই সেখানে।



কলকাতা ছুঁয়ে দেখা একটুকরো ঘাসজমি নিয়ে সেই আমাদের ময়দান, আদরের নাম গড়ের মাঠ। কে,‌ কখন এই ফাঁকা জমিটায় বহুতল গড়বার প্রস্তাব অনায়াসে, আশ্লেষে ছেড়ে দিয়েছিল, তা আমি জানিনা।



তবে, জনাকয়েক মিলে আড্ডা দেবার জন্য, কিংবা যুগলে হাতে-হাত বাদাম ভাজা ছড়িয়ে নিরন্তর নস্টালজিয়ায় বেকারত্ব উপভোগ করার জন্য কিংবা হন্যে হয়ে বিকিকিনির বাজারে ঘুরতে ঘুরতে দুদন্ড ঠাঁই নেবার জন্য একটা আস্ত খোলা প্রান্তরের আমাদের দরকার সকলেরই।



তাই বোধহয় ঘন সবুজ আলোআঁধারি ট্রামের যাত্রাপথে সামিল হতে আজও ইচ্ছে করে। আজও ইচ্ছে করে যে কোন একটা বাঁকে দুম করে নেমে পড়ে ফের অনেকটা ঘুরে আবার ট্রামে উঠে পড়তে।


এ চলার একটা মায়াবী ঘোর আছে, যা আমায় প্রতিবার শীতঘুমে একটা বিস্তৃত ঘাসজমির ওপর ছেড়ে দেয় সূর্যোদয়ের সাক্ষী রাখবে বলে।

কুয়াশার ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা সকাল হতে দেখা


ভোর থেকে সকাল অবধি প্রতিবারই নীল থেকে হলদে হবার একটা খেলা চলে। এ খেলাটা নেশার মতন, বারবার ধরতে ইচ্ছে করে, যাকে বলে ফ্রেমবন্দী করা। তবে, আজ পর্যন্ত চোখের দেখার কাছে ফ্রেমের বন্দীদশা, হার মেনে গেছে প্রতিবারই। ক্যামেরা, ট্যামেরা বন্ধ করে হাঁ করে পূবদিগন্তে তাকিয়ে দেখেছি, ‘সকাল কীকরে হয়?!?’


আগুনের আঁচে সূর্য ওঠে মহানগরে


তবু, শহরটাতো কলকাতা। তাই, যে কোন মায়াবী ভোরেও হাট বসে এখানে, রুটিরুজির হাট। ছোলা-বাদাম-কেক-বিস্কুট-খবরের কাগজ, রঙিন কাচের বোতলে ভরা সিরাপ কিংবা রাজকীয় মেজাজে বন্দুক তাক করে বেলুন ফাটানোর কিম্ভূত প্রতিযোগিতা– সবই চলে এখানে।


বিকিকিনির হাট


এসবের মাঝেই দুপাশের মাঠ জুড়ে চলতে থাকে ব্যাটে-বলের উত্তেজনা।


আরেকটু এগোলে সব খেলার সেরা ফুটবল, বাঙালীর আর বললাম না, কারণ ভোরের ময়দানে আজকাল বাঙালি খেলোয়াড় সংখ্যালঘু প্রায়। জাতীয় জনগোষ্ঠী জাতিভেদ ভুলে শরীরচর্চা এবং মুক্ত বায়ুর অধিকারে দলে দলে পথে নেমে পড়ে গোটা ময়দান জুড়ে- এ চিত্র বেশ অনেকবছরই হয়ে গেল আমরা দেখছি।



ময়দানের বটগাছের সুনিবিড় ছায়াতলে যে আড়াল ছিল, তাতে খানিকটা ছেদ পড়লেও এখনো কিছু কিছু মুহূর্ত রয়েছে, যার সাক্ষী থাকতে পৌঁছে যেতে ইচ্ছে করে।



এই তো কয়েকটা কালো ঘোড়া, মহানগরীর সৌন্দর্যায়নের স্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে রোজ সকালে আমাদেরই জন্য, তাদের নিশ্চিন্তে কে, কবে শেষবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছিল- আমরা তা জানিনা। তবু দেখে বলতে পারি- কলকাতা, কলকাতাতেই আমার শহর, এই যা!



আমাদের ঘোড়াগুলি



আর বেশী কি চেয়েছিলাম, সকালের সোনালি আলোয় চকচক করে ওঠা ঘোড়ার গাড়ির প্রথম যাত্রাপথটা দেখা অথবা রোববার একটু বেলার দিকে বাঁশের সাঁকোর অবয়বে পা রেখে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত এক পায়ে হাঁটার ম্যাজিক এখনো ভিড় জমায়, পয়সা ছোঁড়ে, হাততালি দেয় উল্লাসে।


মুহূর্তেরা


এসবের মাঝেই মিশে যায়- সুরদাসী ভজনের সুর। বার্ধক্য পেরোনো কঠিন চোখ ছাইরঙা শাল গায়ে, লাঠি হাতে দূরে দাঁড়িয়ে দেখেন, বাঁ পায়ে গোল দেবার একটা মুহূর্ত।


রঙিন বন্দুকবাজী আর একটু ল্যাদ


এসবের মাঝেই তিলোত্তমার সবচেয়ে সুন্দরী স্থাপত্য, এক বুক ইতিহাস আগলে দাঁড়িয়ে থাকে সামনে, তোমাকে-আমাকে থমকে দেবে বলে। শতাব্দী প্রাচীন পাথরচাপা কান্নার স্রোত, দিবারাত্র বয়ে চলে যেখানে, নুড়িতে নুড়িতে ধাক্কা খেতে খেতে।



কত নীল কুয়াশার ভোর, কত বেগনে বিকেলবেলা আর কত সায়ন্তনী আলো-শব্দের খেলায় জড়িয়ে আছে সে, নাগরিক সভ্যতার সবচেয়ে আশ্চর্যের মহারাণীটি হয়ে। তাকে আরেকবার শাটারবন্দী করতে করতে এগিয়ে চলা মূল সড়কের দিকে।


যে পথে হঠাৎ হঠাৎ খানকুড়ি পায়রা উড়ে যায় সশব্দে, তোমায় জাগিয়ে তোলার জন্য- আনন্দে, বিষাদে চিৎকার করে নিজেকে পথের মাঝে খুঁজে পাবার জন্য।


দৃষ্টিরা থমকে যায় যেখানে



এ জানার নিরন্তর অধ্যায় যতদিন সতেজ থাকবে, ততদিন এই মহানাগরিক ঘাসজমি টেনে আনবে আমায় শিশিরে পা ভেজাতে, গাছের ছায়ায় ইকিরমিকির কাটতে। একটা মেঘ জমিয়ে রাখা ধূসর রঙের চাদর আর আকাশ থেকে লুফে নেওয়া জোকারের মত রঙবেরঙের মাফলার জড়িয়ে- ঠিক এইখানে, যেখানে পাতাঝরার মরশুমের শেষে পাহাড় আর সমতলের কুয়াশাদের দেখা হয় একসাথে- দিগন্তজোড়া সূর্য উঠবে বলে।





 
 
 

Commenti


© 2023 by NOMAD ON THE ROAD. Proudly created with Wix.com

  • Facebook
  • Instagram
bottom of page