জয়নগরের বনেদী পুজো পরিক্রমা
- Shrabanti Mitra
- Oct 22, 2020
- 6 min read

শারদোৎসব বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকে বাঙালি তার যাবতীয় আনন্দ-উল্লাস-আরাধনাকে এক সুত্রে গেঁথেছে এই দুর্গাপুজোর মাধ্যমে। বনেদী থেকে বারোয়ারি সর্বত্রই কোন এক শক্তি, যা আমাদের বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত প্রাত্যহিকতার গ্লানিময়তা থেকে দূরে রাখে। তবে, আজকের যুগে শহুরে মানুষজনের অনেকেই ইচ্ছে প্রকাশ করেন, কলকাতার প্যান্ডেলের ভিড় ছেড়ে দূরে চলে যাবার। প্রশ্ন করেন এমন কোথায় যাওয়া যায়, যেখানে একটু নিরিবিলিতে পুজোর গন্ধ নেওয়া যেতে পারে?

কলকাতা অথবা কলকাতার বাইরে সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব হয়, এমন বনেদী বাড়ির সংখ্যা নেহাত বেশী বৈ তো কম নয়। প্রতিটি জেলার প্রায় প্রত্যেকটি অঞ্চলে সাবেকী বাড়ির পুজোগুলি এখনো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, প্রাচীনত্বের ধারাকে বজায় রেখে চলেছে বংশ পরম্পরায়। প্রতিটি বাড়ি তাদের নিজ বৈশিষ্ট্যে সতন্ত্র। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি তার আঞ্চলিক এবং ইতিহাসভিত্তিক দিক থেকে এত বেশী বিস্তৃত, যে তাদের কূল-কিনারা করা কঠিন হয়ে পড়ে এক একসময়। কোথাও কোথাও একটি বাড়ি থেকে আরেকটি বাড়ির দূরত্বে কয়েকশো মিটারের ব্যবধান, কোথাও আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে বেশ অনেকটা এগিয়ে সন্ধান পাওয়া যায় আরেকটি বাড়ির। তবে যারা কলকাতা থেকে খুব দূরে না গিয়ে একই দিনে, একই অঞ্চলে কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে বেশ কয়েকটি বনেদী বাড়ির পুজোতে সামিল হতে চান, এবং ফিরেও আসতে চান দিনের দিনই, তাদের জন্য রইল আমার আজকের বনেদী পুজোর গল্প।

কলকাতা থেকে অনতিদূরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত অন্যতম প্রাচীন পৌরশহর জয়নগরকে আমরা সকলেই চিনি সুপ্রসিদ্ধ “মোয়া” প্রস্তুতকারীর কেন্দ্র হিসেবে। তবে, জয়নগরের মোয়া যেমন ঐতিহাসিক, তেমনই জয়নগর অঞ্চলের ইতিহাসও একইরকম ভাবে সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। আদি গঙ্গার প্রাচীন প্রবাহ পথে সুন্দরবনের অন্তগর্ত, এই অঞ্চল গড়ে উঠেছে পাশাপাশি দুটি এলাকা জুড়ে, যার একটি হল জয়নগর; ওপরটি মজিলপুর। যদিও জনপথ হিসেবে জয়নগর সুপ্রাচীন। ষোড়শ-সপ্তাদশ শতকের মঙ্গলকাব্যে জয়নগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, স্থানীয় দেবী জয়চন্ডীর নাম থেকে উৎপত্তি হয় এই “জয়নগর”-এর। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে যখন জয়নগর জঙ্গলাকীর্ণ ছিল, তখন কলকাতার মতিলাল বংশের পূর্বপুরুষ গুনানন্দ মতিলাল ছিলেন এখানকার জমিদার। তিনি প্রায় চারহাজার সৈন্য ও দশটি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে বসবাস করা আরম্ভ করেন এই অঞ্চলে। একদিন ব্যাবসায়িক কাজে আদিগঙ্গা ধরে যেতে যেতে নোঙর করেন যেখানে, তার অতিদূরেই এক জনশূন্য স্থানে রাতের অন্ধকারে দেবী জয়চন্ডীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। সেই আদেশ অনুযায়ী মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে একটি পাথরখণ্ড আবিষ্কার করেন এবং ধীরে ধীরে সেখানেই মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এখনো প্রতি জ্যৈষ্ঠপূর্ণিমায় দেবীর স্থাপনকাল উপলক্ষে উৎসব হয় এই স্থানে। অন্যদিকে পৌরাণিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় জয়নগরের পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে বয়ে যেত আদিগঙ্গা, তারপর সেই গঙ্গার পলিমাটি জমে গিয়ে গঙ্গা মজে যায়, সৃষ্টি হয় নতুন বসতির এবং এভাবেই গড়ে ওঠে ‘মজিলপুর’। মতিলাল বংশের পর বেহালার বড়িশা অঞ্চল থেকে এখানে আসেন জমিদার রামগোবিন্দ মিত্র। এই মিত্র বংশের প্রতিষ্ঠিত দোলমঞ্চ ও রাধাবল্লভের মন্দির এখনো জয়নগরের প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও মিত্র-গঙ্গা দীঘির পাশে রয়েছে পোড়ামাটির ভাস্কর্যের দ্বাদশ শিবমন্দির, যার স্থাপনকাল ১৭৫৫-১৭৯৯ সালের ভিতর। এই জয়নগরের আরেকটি অজানা বিষয় হল পোড়া মাটির পুতুল। শিল্পী মন্মথনাথ দাসের মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই মাটির পুতুলের শিল্পকর্ম। জয়নগরের এইসমস্ত অঞ্চল জুড়েই একসময় বিস্তৃত ছিল খেজুরবন, যার পরবর্তী ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা।

জয়নগর মিত্র পাড়া
এইসময় জয়নগরে বেশ কিছু জমিদারশ্রেণির ব্যক্তির বসবাস ছিল, তাদের বেশীরভাগই শিক্ষাক্ষেত্রে চতুষ্পাঠী পরিচালনার পাশাপাশি দুর্গোৎসবেও সামিল হয়েছিলেন। তাই এবার আসি জয়নগরের বনেদী বাড়ির পুজোর প্রসঙ্গে।
সমগ্র জয়নগর এবং মজিলপুর অঞ্চল জুড়ে প্রায় পরপরই অনেকগুলি বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। এই সবকটি বাড়ি থেকে সমান ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায়, যতটুকু জানা গেছে তার ভিত্তিতেই পুজোগুলির বিষয়ে লেখা হল।
জয়নগর দত্ত বাড়ির পুজো

লাল দত্ত বাড়ির পুজো
মজিলপুরের দত্ত পরিবারের রামচন্দ্র দত্তের জমিদারি ছিল বিস্তৃত সুন্দরবন জুড়ে। এরপর মজিলপুরে নিজস্ব বাড়ি এবং শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রত্নতাত্ত্বিক কালিদাস দত্তের জন্ম হয়েছিল এই পরিবারে। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভূত ভূমিকা আছে এই পরিবারের। দত্ত পাড়ার এই দত্ত বাড়ি দুই অংশে বিভক্ত, যার মধ্যে একটি হল লাল দত্ত বাড়ির পুজো। এই বাড়ির পুজো প্রথম শুরু করেন দ্বারিকানাথ দত্ত আজ থেকে ২৩০ বছর আগে। এখন পঞ্চম প্রজন্মের সদস্যরা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পুজোর ঐতিহ্যকে। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে পুজো হয় এই বাড়িতে এবং বলিপ্রথা একেবারেই নিষিদ্ধ। পঞ্চমীর দিন বেলতলায় বোধন হয় দেবীর এবং ষষ্ঠীর সন্ধ্যেতে বিভিন্ন অলঙ্কারে ভূষিত করা হয় এই মৃন্ময়ী প্রতিমাকে। সাবেকি একচালা প্রতিমার এই পুজোয়, রীতিনীতি সাদামাটা হলেও সন্ধিপুজোর সন্ধিক্ষণ এখনো শুরু হয় বন্দুকের শব্দে।

সাদা দত্ত বাড়ি
এরপরেই রয়েছে সাদা দত্ত বাড়ি, যাদের পুজো লাল দত্ত বাড়ির চেয়েও প্রাচীন। আজ থেকে ২৫০ বছরেরও বেশী আগে শ্রীরামচন্দ্র দত্ত শুরু করেন এই বাড়ির পুজো। এখানে পুজো হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতানুসারে।

সাদা দত্ত বাড়ির পুজো
জয়নগর মিত্র বাড়ির পুজো

জয়নগর মিত্র বাড়ির পুজো
জয়নগরের মিত্র পরিবার অন্যতম প্রাচীন পরিবারের একটি। দত্ত বাড়ির মত এটিও লাল আর সাদা এই দুই অংশে বিভক্ত। এই পরিবারে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয় ১১৪০ বঙ্গাব্দে, শ্রী মধুসূদন মিত্রের হাত ধরে। পরিবারের আরেকটি শাখায়, দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেন মহেশ্চন্দ্র মিত্র ১৭৭৮-১৮৫৬ সালের মধ্যে এবং একইসঙ্গে মিত্র গঙ্গার পূর্ব তীরে একটি স্নানের ঘাটও নির্মাণ করেন। কিন্তু তাঁর অকালে মৃত্যু হওয়ায় তাঁর পুত্র অন্নদাপ্রসাদ ১৮৯৫ সালে দুর্গোৎসব পুনরায় আরম্ভ করেন এবং তারপর থেকে এখনো অবধি বংশ পরম্পরায় পালিত হচ্ছে এই উৎসব। দুর্গাপুজো উপলক্ষে সেই সময়ে স্থানীয় মহিলাদের নবমীর মধ্যাহ্নভোজনে আপ্যায়ন করা হত। শোনা যায় সে সময়ে দুর্গাপুজোয় সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছিল ৬৩০ টাকা। এই পরিবারের কৃষ্ণমোহন মিত্রের কৃতিত্বেই পাঁচখিলানযুক্ত দুর্গাদালান গড়ে ওঠে এবং সাথে সাথে রথও প্রতিষ্ঠা হয় এই পরিবারে, যা জয়নগরের ইতিহাসে সমৃদ্ধতা বজায় রেখেছে এখনো। সেই সময় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসরেও জমজমাট হত এই মিত্র পরিবারের ঠাকুরদালান।

জয়নগর মিত্র বাড়ির (লাল) পুজো
এই সাবেকি তিনচালার প্রতিমার কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ায় প্রতিদিনই দেবীকে নিরামিষ ভোগদান করা হয়। অষ্টমীতে এখনো কুমারী পুজোর রীতি বর্তমান এখানে। আগে পাঁঠা বলি হলেও, এখন তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে এখনো চিরাচরিত প্রথা মেনে দশমীর দিনে কাঁধে করে বিসর্জন দেওয়া হয় এই মাতৃপ্রতিমাকে। এর পাশাপাশি গোপীনাথ জিউয়ের উৎসবও আজ অবধি পালিত হয়ে আসছে এই পরিবারে।

জয়নগর মিত্র বাড়ির (সাদা) পুজো
জয়নগর সিদ্ধান্ত বাড়ির পুজো

সিদ্ধান্ত বাড়ির পুজো
মজিলপুরে এই পরিবারের প্রতিষ্ঠার পিছনে একটি পৌরানিক কাহিনী জড়িত আছে। মহারাজা প্রতাপাদিত্যের মুন্সী চন্দ্রকেতু দত্ত তাঁর জজ্ঞের পুরহিত শ্রীকৃষ্ণ উদগাতা এবং রঘুনন্দন পোতাকে ১৬০৬ সাল নাগাদ, এই আদি গঙ্গার মজিত রুপ মজিলপুরে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসেন। এই শ্রীকৃষ্ণ উদগাতার প্রপৌত্রগণ ছিলেন বঙ্গদেশের সংস্কৃতিচর্চায় এক-একজন দিগগজ পণ্ডিত। এঁরা প্রত্যেকেই কৃতিত্বানুসারে বিভিন্ন খেতাব পান, যার মধ্যে একটি হল সিদ্ধান্ত। এখান থেকেই সিদ্ধান্ত পরিবারের বিস্তারলাভ, যাঁদের কৃতি স্বনামধন্য ব্যক্তি হলেন কালিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ। একটি কালীর মূর্তি এখনো আছে এই বাড়িতে এবং রয়েছে বাড়ির সংলগ্ন শিব মন্দিরও। আজ থেকে প্রায় ১৮০ বছর আগে শুরু এই পরিবারের দুর্গোৎসব। একচালা প্রতিমার অপরুপ রূপসজ্জা এখনো সাবেকিয়ানা বজায় রেখেছে এই পরিবারের ঐতিহ্যে।
জয়নগর কান্যন বাড়ির পুজো

জয়নগর কান্যন বাড়ির (ছোট)পুজো
জয়নগরের কুমোর পাড়া লেনের কান্যন বাড়ির পুজো ৩০০ বছরের প্রাচীন। কান্ব্যায়ণ অপভ্রংশে কান্যন মূলত দাক্ষিনত্যের বৈদিক ব্রাহ্মন শ্রেণীর অন্তর্গত পরিবার। এই গত্রের অধিকারী শ্রী কেশবচন্দ্র ভট্টাচার্য হুগলীর প্রতাপপুর থেকে মজিলপুরে এসে বসবাস করা শুরু করেন। মূল প্রাচীন পদবী ভট্টাচার্য হলেও স্থানীয় লোকজন এটিকে “কান্যন বাড়ি” হিসেবেই চেনেন। সে সময় যে সমস্ত পণ্ডিতগণ মজিলপুর অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেন তাঁদের মধ্যে তর্কপঞ্চানন মহাশয় অন্যতম। তাঁর আমলেই এই পরিবারে সম্ভবত ১৭৯০ সাল নাগাদ দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই কান্যনদেরও দুটি বাড়িতে পুজো হয় পাশাপাশি(বড় ও ছোট)। এখানে মহামায়ার মুখের আকৃতি প্রচলিত গড়নের চেয়ে সামান্য ভিন্ন।

জয়নগর কান্যন বাড়ির (বড়)পুজো
প্রায় ২০০ বছর আগে এই পরিবারে রঘুনন্দন ন্যায়রত্ন অধিষ্ঠিত হন। তাঁর পরবর্তী তৃতীয় প্রজন্মের পুরুষ আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে কোন এক সময়ে অযোধ্যা থেকে পদব্রজে শ্বেতপাথরের একটি লক্ষ্মণের মূর্তি নিয়ে আসেন এই বাড়িতে। এই লক্ষ্মণই কান্ব্যায়ণ পরিবারের আরাধ্য গৃহদেবতা।

কান্যন বাড়ির গৃহদেবতা লক্ষ্মণ
জয়নগর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো

চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো
এই পরিবারের হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিক্ষ্যাত রাজনীতিবিদ। পরবর্তীকালে বেশ কিছু সমাজ সংস্কারক কাজে লিপ্ত হন। এই বাড়ির সাবেকি একচালা প্রতিমা বনেদী হলেও, খুব সাদামাটা ভাবেই পুজো হয় এখানে।
জয়নগর মতিলাল বাড়ির পুজো

মতিলাল বাড়ির পুজো
জয়নগরের জমিদার আক্ষরিক অর্থে ছিলেন গুনানন্দ মতিলাল। সেই বংশের সুত্র ধরে পরবর্তীকালে এই পরিবারে জন্মান আর এক কৃতী সন্তান, যিনি হলেন কলকাতার বৌবাজার অঞ্চলের মতিলাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বনাথ মতিলাল। এই বংশে প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেন রত্নেশ্বর মতিলাল, আজ থেকে ২৫০ বছর আগে।
জয়নগর ঘোষ বাড়ির পুজো

ঘোষ বাড়ির পুজো
বাংলার ১১৭০ সাল নাগাদ কালীচরণ ঘোষ প্রথম এই জয়নগরে বসতি স্থাপন করেন। এর পরবর্তীকালে রামজয় ঘোষ ১২০০ বঙ্গাব্দে স্বপ্নাদেশ পান রাধাকৃষ্ণের সেবা করবার। তারপর এক ব্রাহ্মন সেই বিগ্রহ নিয়ে খাল্পথে ঘোষ বাড়িতে এসে রামজয় ঘোষের হাতে তুলে দেন এবং দৈব আদেশানুযায়ী নিজের বাড়িতে নন্দন বিগ্রহ মহাসমারহে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরবর্তীকালে এই রামজয় ঘোষই এই পরিবারে দুর্গোৎসব এবং পাশাপাশি রাসযাত্রার শুভ সূচনা করেন। ঘোষ বাড়ির সাবেকি একচালা প্রতিমার দুর্গাপুজো প্রায় ৩৮০ বছরের প্রাচীন।
জয়নগর সরকার বাড়ির পুজো

সরকার বাড়ির পুজো
ধন্বন্তরী চিকিৎসক এবং সমাজ সংস্কারক নীলরতন সরকারের মামারবাড়ি হল এই সরকার বাড়ি। ডায়মন্ড হারবারের কাছে একটি গ্রাম থেকে এই অঞ্চলে এসে বসবাস করা শুরু করেন এই সরকার পরিবার। এখানেই নীলরতন সরকার ও তাঁর ছোট ভাই বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকার কৈশোরযাপন করেন। কালো পাথরে নির্মিত শ্রী শ্রী বাসুদেব জিউ পূজিত হয় এখানে প্রতিদিন। এই পরিবারের দুর্গাপুজো ২০০ বছরের প্রাচীন। পরিবারের সকলের যৌথ সহযোগিতায়, এখনো প্রাচীনত্বের ধারা বজায় রয়েছে সরকার বাড়ির দুর্গাপুজোর রীতিনীতিতে।

সরকার বাড়ির শ্রী শ্রী বাসুদেব জিউ
কীভাবে যাবেনঃ-
কলকাতা থেকে জয়নগর যাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হল শিয়ালদার দক্ষিণশাখার ট্রেন ধরে জয়নগর-মজিলপুর স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে বাড়িগুলি পরিভ্রমণ করা। দুএকটি বাড়িতে পৌঁছোবার ক্ষেত্রে স্থানীয় যানবাহনের সাহায্য নিতে হতে পারে। অন্যথায় বাড়িগুলির দূরত্ব খুব বেশী না হওয়ায়, মফঃস্বলের পুজোর আমেজ নিতে নিতে হাঁটা পথেই গোটা দিনটা অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
নিজস্ব গাড়ি থাকলে গড়িয়া হয়ে বারুইপুর রুট ধরে আসা যেতে পারে।
খাওয়াদাওয়াঃ-
পুজোর সময় আপনি যেখানেই যান না কেন, খাবারদাবারের বিশেষ সমস্যা কোথাওই সেভাবে হয়না। তবে বিশেষ কিছুর স্বাদ পেতে চাইলে কিংবা সঙ্গে নিয়ে আসতে চাইলে শ্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মোয়া অবশ্যই একবার খেয়ে দেখতে হবে।
তাই, বারোয়ারি পুজোর পাশাপাশি মফঃস্বলের বনেদী পুজোর আনন্দ নিতে, দুর্গাপুজোর চারদিনের একদিন বেরিয়ে পরা যেতেই পারে জয়নগর-মজিলপুরের বনেদী বাড়ির পুজো পরিক্রমাতে।

ধন্যবাদ ও বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ জয়নগর মিত্র পরিবারের ডঃ ভৈরব চন্দ্র মিত্র ও কৌশিক মিত্র এবং জয়নগর-মজিলপুরের সকল পরিবারের সদস্যদের।
তথ্যসুত্রঃ জয়নগর-মজিলপুরের ইতিহাস- ডঃ ভৈরব চন্দ্র মিত্র।
Comentarios