top of page

রাজবাড়ির খোঁজে

  • Writer: Shrabanti Mitra
    Shrabanti Mitra
  • Jul 7, 2020
  • 3 min read


গড়িয়া রাজবাড়ি


অনেকদিন ধরে রাজবাড়ি যাবার জন্য মন কেমন করছিল। এ আমার প্রায়ই হয়। বছরে অন্ততপক্ষে, গোটা আটদশেক রাজবাড়ী আর জমিদারবাড়ি না দেখলে, কেমন একটা ম্যাদামারা টাইপের ফিলিং হয়। মনে হয়, কিসুই যেন করলাম না সারাবছর।এপ্রিল থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সময়টা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা থাকে। প্রথমে প্রবল রোদ, তারপর প্রবল বৃষ্টি।এসব চক্করে বেরনো হয়না। কিন্তু সেদিন কি হল কি জানি! শ্রাবণের প্রবল বর্ষণের মাঝে বেরিয়ে পড়লাম সেই এক অদ্ভুত নেশায়।

আচ্ছা, কলকাতার কাছাকাছি ভালো রাজবাড়ি কি আছে? অনেকেই এই প্রশ্নটা আমাকে করেছেন এর আগে। তাদের জন্য বরং রইলো আমার আজকের গল্পটা।

হ্যাঁ, আমি ছাতা নিয়ে বেরতে ভুলে গেছিলাম। কিন্তু তাতে কি! মেঘের সাথে তো আগেই ক্যালকুলেশন করা ছিল টাইমিং টা। তাই টুক করে মেট্রো ধরে নিউ গড়িয়া, তারপর ক্যানিং লোকালে চেপে চাম্পাহাটি। এই নামটা শুনলেই মনে পড়ে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, বাজির জন্য বিখ্যাত। তবে, আমার গন্তব্যপথ চীনার মোড় থেকে খানিকটা এগোলেই যে বাড়িটা, তার দিকে। গড়িয়া রাজবাড়ি। সুবিশাল, সুবৃহৎ, রাস্তা আগলে রাখা, পুকুরের ওপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জায়েন্ট একটা বাড়ি।


আগাছা আর বটের ঝুরি রাজবাড়ির দেওয়ালে


দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায়ের নাম মনে আছে কারোর? এক সময়ের বাংলা চলচিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা। যাঁর অভিনীত চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি আর দেনা পাওনা বাঙালীর মনে আলাদা জায়গা করে রেখেছিল। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন, এই বাড়িরই সদস্য। এই পরিবারের মূল জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গৌরীকান্ত বন্দোপাধ্যায়। গৌরীকান্তের ছোট ছেলে রামরতন বন্দোপাধ্যায় নিজেদের জমিদারির প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি, গড়িয়া রাজপুর সংলগ্ন অঞ্চলে, টানা পাঁচ মাইল রাস্তা তৈরিতে অবদান রাখেন। এর পরবর্তীকালে, জমিদারিকে আরও সমৃদ্ধশালী করে তোলেন যদুনাথ বন্দোপাধ্যায়, যাঁর নামে চাম্পাহাটির প্রাচীন স্কুল, যদুনাথ বিদ্যামন্দির গড়ে উঠেছিল। এই পরিবারের আরেক বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব ছিলেন, রাজনীতিবিদ এবং ১৯৬৭ সালের বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির মেম্বার, স্বর্গীয় বিজয় কুমার বন্দোপাধ্যায়। হাজরা অঞ্চলে এঁর বাসস্থানটি এখনো চোখে পড়ে। আদতে জমিদারী কেন্দ্রিক হলেও, পরবর্তীকালে “রাজ” উপাধিতে ভূষিত হয় এই পরিবার।


রাজবাড়ির ছাদের গোলাকৃতি ভগ্নদশা


বর্তমানে সাউথ গড়িয়া বন্দোপাধ্যায় পরিবারের জমিদারি-একটি জয়েন্ট এস্টেট। মূল জমিদারি দুটি অংশে ভাগ হয়ে গেছে। একটি অংশ মূল রাজবাড়ির সঙ্গে যুক্ত। আরেকটি অংশ, এই বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে বাঁ দিকে একটি বাড়ি, যেটিকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একটি কারখানার মতন, আসলে সেটি গড়িয়া রাজবাড়ির দুর্গা দালান, যেখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে গত ৩৫০ বছর ধরে। এছাড়াও প্রতি বছর, জাঁকজমক সহকারে দোলযাত্রার উৎসব পালন হয়। এই বাড়িতে রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত রাধাগোবিন্দ জীউ এবং তাঁর দেবোত্তর এস্টেট ট্রাস্টের অনুদানে নানান আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপ চলে সারাবছর এখানে। বর্তমানে এই ট্রাস্টের হেড শ্রী কনক বন্দোপাধ্যায়।


গড়িয়া রাজবাড়ির ঠাকুরদালান


সাঙ্গীতিক পরিমণ্ডলের ক্ষেত্রেও এই পরিবার এখনও তার সুনাম বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে। প্রতি বছর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর বসে এখানে। এক সময় খ্যাতনামা সব উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পীরা আসর বসাতেন এই বাড়িতে। এসব টুকটাক পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে কথা হচ্ছিল পরমজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের সাথে। ইনিও এই প্রজন্মের একজন নামজাদা বাঁশূরী শিল্পী।


রাজবাড়ি বাঁশের ফাঁকে


এদিককার পর্ব শেষ করে এগিয়ে চললাম, হালদার বাড়ির দিকে। হালদার বাড়িতে তখন মা দুর্গার খড় বাঁধা চলছে। ততক্ষণে এক চোট বৃষ্টি হয়ে জল দাঁড়িয়ে গেছে উঠোন জুড়ে (না, আমি ভিজিনি,ঠাকুরদালানের ভেতর ছিলাম)। বাড়ির পিছনের দিকটায় আগাছা ঘেরা একটা জলাশয়ও আছে। পরিবারের কেউই এখানে থাকেন না। সকলেরই কলকাতায় নিজস্ব আলাদা আলাদা বাড়ি রয়েছে। সপ্তাহন্তে এসে বাড়ির দেখভাল সেরে বেরিয়ে যান।


চাম্পাহাটি হালদার বাড়ি


পরিবারের এক সদস্যের সাথে কথা বলতে বলতে জানা গেল, এই বাড়ির দুর্গাপুজো বন্দোপাধ্যায় বাড়ির থেকেও প্রাচীন। তবে, বাড়ির বিষয়ে বিশদে জানবার জন্য বললেন দুর্গাপুজোর সময়ে আসতে। বর্তমানে নামকরা মিডিয়া হাউসের যুক্ত এই পরিবার।


হালদার বাড়ি ঠাকুরদালান থেকে


হালদার বাড়ি থেকে বেরোবার পরই ঝেঁপে বৃষ্টি এল। আমি ওমনি ফের হালদার বাড়ির ভেতর ঢুকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়িমরি করে ক্যামেরাটাকে আগলাতে লাগলাম।


হালদার বাড়ির জলমগ্ন উঠোন


এই ফাঁকে বলে রাখি, সঠিক ভাবে অনুমতিপ্রাপ্ত না হয়ে ভুলেও যাবেন না গড়িয়া রাজবাড়ির ছবি তুলতে। ঝুল বারান্দার ওপর এক পিসিমা দাঁড়িয়ে থাকেন, স্বতন্ত্র প্রহরীর মত। ক্যামেরা হাতে এদিক ওদিক করতে দেখলেই এমন সুভাষণ দেন, যা পুকুরের ওপ্রান্ত থেকে শুনতে পাওয়া যায়। যাইহোক, বৃষ্টি থামতে গুটিগুটি পায়ে চীনার মোড়ের দিকে এগোচ্ছি, বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি নিঃশব্দে নালার ওপর ভেসে উঠল একটি প্রাণী। আমি ক্যামেরার শাটার বাটন, দুবার ক্লিক করার পরই আর কোনোদিকে না তাকিয়ে স্ট্রেট হাঁটা দিলাম চাম্পাহাটি স্টেশনের দিকে। ততক্ষণে আবার দু এক ফোঁটা শুরু হয়ে গেছে...


নীল থাম আর সাদা রঙের নকশা

 
 
 

1件のコメント


Shubham Mukherjee
Shubham Mukherjee
2020年7月08日

বাহ!

いいね!

© 2023 by NOMAD ON THE ROAD. Proudly created with Wix.com

  • Facebook
  • Instagram
bottom of page